কালমেঘ একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ, এটি আধা মিটার থেকে এক মিটার
পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখা চারকোনাকৃতি, পাতা নরম ও সবুজ। পাতার
অগ্রভাগ এবং বোঁটার দিক ক্রমশ সরু, গাঢ় সবুজ রঙের, দেখতে মরিচ পাতার মতো। বর্ষার শেষে
পত্রকক্ষ থেকে লম্বা পুষ্পদণ্ড বের হয় এবং এ পুষ্পদণ্ডে হালকা সাদার মাঝে বেগুনি ফোঁটাযুক্ত
ফুলগুলি সাজানো থাকে, এর ফল দেখতে অনেকটা সরিষার
দানার মতো। পাকা বীজের রং হালকা খয়েরি। এটি অঞ্চলভেদে কল্পনাথ হিসেবেও পরিচিত। বর্ষার
শেষ থেকে শীতকাল অবধি ফল হয়। কালমেঘ সাদে তিতা, চিরতাও তিতা। তাই অনেকে এ গাছ শকিয়ে চিরতা বলে বিক্র করে।
উল্লেখ্য, আমাদের দেশে চিরতা জন্মায়না। বাংলাদেশে সর্বত্রই কালমেঘ দেখা যায়। হালকা
ছায়াবিশিষ্ট রসযুক্ত মাটিতে এটি ভাল জন্মে। কালমেঘের আদি বাসস্তান ভারত ও শ্রীলঙ্কা।
কালমেঘ স্বাদে তিক্ত রসান্বিত হলেও এটি যেসব রোগের উপশম
করে চিরতা বা কুইনাইল সেখানে কাজ করে না। কালমেঘের প্রধান ব্যবহার পেটের বিভিন্ন পীড়ায়,
যেমন- উদরাময় বা অতিসার, অম্ল, অজীর্ণ, রক্ত আমাশয় ইত্যাদি।
অগ্নিমান্দ্য হলেও যাঁরা বাছবিচার না করে সবকিছু খেয়ে চলেন,
তাঁরা উদরাময় বা অতিসারে আক্রান্ত হন। এ ক্ষেত্রে ৩০-৩৫ ফোঁটা কালমেঘের রসের সাথে এক
চিমটি নস্যি ও আধা চা চামচ পানি মিশিয়ে সকাল-বিকাল দুইবার ৩/৪ দিন খেলে উদরাময়ের উপশম
হবে এবং ক্ষুধাও বেড়ে যাবে।
অজীর্ণ থেকে সাধারণ অম্ল বা অম্বলের উৎপত্তি হলে কালমেঘ পাতার রস আধা চা চামচের সাথে
২টিপ পরিমাণ বড় এলাচের দানার গুঁড়া মিশিয়ে সকালে খেলে উপশম হবে।
অতিসার বা উদরাময় সারেনি এমন অবস্থায় খাওয়াদাওয়ায় অনীহা
চলে। এমন ক্ষেত্রে প্রথমে সাধারণত আমাশয় এবং পরে রক্ত আমাশয় শুরু হয়। এরকম হলে ১৫ ফোঁটা
কালমেঘের পাতার রস সকাল-বিকাল দুবার করে খেলে দুই দিনের মধ্যেই রক্ত আমাশয় সেরে যায়।
এছাড়া সাধারণ দুর্বলতা ও পাকস্থলীতে অতিরিক্ত গ্যাস হলেও কালমেঘ বিশেষ উপকারী। শিশুদের
লিভারের দোষ এবং বদহজমেও এটি কার্যকর।
পূর্ণবয়স্কদের কৃমির উপদ্রবে যদি কোষ্ঠেকাঠিন্য না থাকে
তা হলে ৩০-৩৫ ফোঁটা কালোমেঘ পাতার রস ও সমপরিমাণ কাঁচা হলুদের রস সামান্য চিনি মিশিয়ে
সকালেও বিকালে খেতে হবে। শিশুদের জন্য এর অর্ধেক মাত্রায় প্রয়োগ করলে কৃমির উপদ্রব
থেকে মুক্তি পাওয়া যাই।
যে কোনো প্রকার পচা ঘায়ে কালমেঘের পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি
দিয়ে দিনে দুবার করে ৩/৪ দিন ক্ষতস্থান ধোয়ালে খুব দ্র্রুত ক্ষতস্থান ভালো হয়ে যাই।
এ ছাড়াও সম্প্রতি প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, কালমেঘ যকৃতের
যে কোনো সমস্যা ও টাইফয়েড রোগেও এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।
0 comments:
Post a Comment