Wednesday, December 4, 2019

December 04, 2019

আকন্দ পাতার উপকারিতা


বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় আকন্দ গাছ জন্মায়। এশিয়ার উষ্ণ অঞ্চল এদের আদি নিবাস। তবে আফ্রিকাতেও এ গাছ পাওয়া যায়। আকন্দ মাঝারি ধরনের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। ইংরেজি নাম Crown Flower. আকন্দ গাছ উচ্চতায় গড়ে ২ থেকে ৮ মিটার হয়ে থাকে। কাণ্ড শক্ত, কচি ডাল সাদাটে রঙের ও লোমশযুক্ত। পাতার আকার-আকৃতি ৪ থেকে ৮ ইঞ্চি হয়ে থাকে। পাতার শিরা-উপশিরা স্পষ্ট, উপরিভাগ মসৃণ এবং পাতার নিচের অংশে তুলোর মতো সাদাটে লোমশযুক্ত থাকে। গাছের পাতা, পাতার বোঁটা ও শাখা-প্রশাখা ভাঙলে দুধের মতো সাদা আঠা বা কষ বের হয়। শ্বেত আকন্দ ও লাল আকন্দ নামে দুধরনের আকন্দ আমাদের দেশে জন্মাতে দেখা যায়। শ্বেত আকন্দের ফুলের রং হয় সাদা এবং লাল আকন্দের ফুলের রং হয় বেগুনি। ফুল শেষে গাছে একাধিক ফল ধরে। ফলের রং সবুজ, অগ্রভাগ বাঁকা। ফল দেখতে অনেকটা ছোট পাখির মতো। ফলের ভেতর তুলা হয় এবং এর ভেতর কালচে রঙের বীজ থাকে।

বহুগুণে গুণান্বিত আকন্দ চুলের রোগ, ব্যাথা এবং বিষনাশে বিশেষ কার্যকরী। দাদ ও টাকপড়া নিবারক। আকন্দের কষ তুলায় ভিজিয়ে লাগালে দাদের ব্যথা দুর করে এবং যোনিতে ধারণ করলে গর্ভপাত ঘটায়। আকন্দ বাত বেদনা নিবারক ও ফোলা অপসারক। আকন্দ পাতা ও হলুদের তৈরি বড়ি ফোলা/পান্ডু রোগ নাশক এবং এর রস কৃমি নাশক। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা শুরু হলে পরিমাণ মতো আকন্দ পোড়া ছাই পানিসহ পান করলে সঙ্গে সঙ্গে উপকার পাওয়া যায়। পেট কামড়ানি বা পেট জ্বালায় আকন্দ পাতার সোজা দিকে সরিষার তেল মাখিয়ে পাতাটি অল্প গরম করে পেটের উপর রাখলে বা ছেঁক দিলে পেট কামড়ানো বা পেট জ্বালা বন্ধ হয়। শোথ বা ফোলা রোগে আকন্দ বিশেষ উপকারী। ফোলাজনিত কারণে কোন স্থান ফুলে উঠলে আকন্দপাতা বেঁধে রাখলে উপকার পাওয়া যায়। শ্বাস কষ্টে আকন্দের শিকড়ের ছাল প্রথমে গুড়া করে তারপর আকন্দের আঠায় ভিজিয়ে রেখে পরে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর তা চুরুট বানিয়ে ধুমপান করলে শ্বাস কষ্ট ভাল হয়। নিউমোনিয়াজনিত বেদনায় আকন্দ পাতার সোজা দিক ঘি মেখে ব্যথার জায়গায় বসিয়ে লবনের পুটলি দিয়ে ছেক দিলে উপকার পাওয়া যায়। হজম শক্তি কমে গেলে  ২ গ্রাম পরিমাণ শুকনো আকন্দ মুল গুড়া করে খেলে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। আকন্দের ব্যবহার্য অংশ হলো ফুল, পাতা, শিকড় ও আঠা। সার্বিক বিবেচনায় আকন্দ গাছ মানুষ, প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য এক অনন্য উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ।


এছাড়াও হাঁপানি রোগে: ১৪ টি সাদা আকন্দ ফুলের মাঝখানের চৌকো মন্ডিত অংশটি নিতে হবে, তার সঙ্গে ২১টি গোলমরিচ দিয়ে একসঙ্গে বেটে ২১টি গুলি বা বড়ি করে শুকিয়ে নিতে হবে। প্রতিদিন সকালে একটি করে বড়ি খেতে হবে, খানিকক্ষণ বাদে একটু দুধ খেতে হবে, আর পথ্য হিসেবে এই ২১ দিন শুধু দুধ-ভাত, বা দুধ-রুটি খেয়ে থাকতে হবে, এটাতে অনেকের এই রোগ সম্পূর্ণ রূপে নিরাময় হয়ে যায়।

অর্শের বলি: যাঁদের অর্শের বলি বাইরে বেরিয়ে রয়েছে, তাঁরা ঐ পাতার চূর্ণে আগুনে দিয়ে সেই ধূম লাগালে কয়েকদিনের মধ্যেই চুপসে যায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে খসেও যায়। এটা গ্রামের মানুষেরা প্রাচীনকাল থেকেই করে আসছে। এবং এটা খুবই কার্যকরী একটি উপায়।

মুখের ব্রণ ফাটাতে আকান্দের পাতা দিয়ে ব্রণ চেপে বা বেধে রাখলে কিছুক্ষনের মধ্যেই ব্রণ ফেটে যাই, এবং ব্রণের দূষিত পদার্থ গুলো বেরিয়ে আসে। যেটা ব্রণ ভালো করার জন্য একটি কার্যকরী উপায় ও বলতে পারেন।

সাপ বা বিষাক্ত কিছু কামড়ালে, আক্রান্ত স্থানে আকন্দের আঠা লাগালে যন্ত্রণার উপশম হয়, এমন কি এর পাতা বেটে লাগালেও বিষের যন্ত্রনা কমে যায়।

শরীরের যে কোনো স্থানের ফোড়া ভালো করতে, পানিতে অল্প তেল মিশিয়ে একটি আকন্দ পাতা সিদ্ধ করে, সেই পানি ছেকে নিয়ে সেই ক্বাথ ২/৩ বারে একটু একটু করে খেলে ফোঁড়া ধীরে ধীরে চুপসে যায়, এবং কিছুদিনের মধ্যেই  ফুলে যাওয়া স্থান স্বাভাবিক হয়ে যায়।

কুষ্ঠ রোগ নিরাময়ে আকন্দের পাতা শুকিয়ে নিয়ে তার ৩ গ্রাম, এবং ছাতিম ছাল ৫ গ্রাম একসঙ্গে আধ সের আন্দাজ পানিতে সিদ্ধ করে ১২৫ মিলিলিটার অর্থাৎ চতুর্থাংশ থাকতে নামিয়ে মোটা কাপড় দিয়ে ছেকে নিয়ে দুধের সঙ্গে ১ দিন অন্তর খেতে হবে এবং দুধ মিশানো পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান ধুতে হবে। এর দ্বারা কিছুদিনের মধ্যে রোগীর রোগমুক্তি হবে।


এ ছাড়াও হেড়ে মাথা বা অনেক সময় দেখা যায় শিশুর মাথাটা অস্বাভাবিক বড়, সে ক্ষেত্রে আকন্দ তুলোর বালিশ করে শোয়ালে মাথাটা আস্তে আস্তে ছোট হয়ে যায়। তবে এটা সাধারণতঃ এক বছর বয়সের মধ্যে ব্যবহার করা উচিত।

0 comments:

Post a Comment