পুনর্ণবা একটি ছোট লতানো উদ্ভিদ।
পুনর্ণবা এর ইংরেজি নাম Pigweed । স্থান ভেদে এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন- শশিবটিকা,
শোতাঘ্নি, পুনর্ভবা, নবা, নব্য, শোণপত্র, পুনাইর শাক ইত্যাদি। এটি মাটিতে কিংবা পুরাতন
দালানের ছাদে বা দেয়ালে জন্মাতে দেখা যায়। বাংলাদেশ ও ভারতে এই গাছ বেশি দেখা যাই।
পুনর্ণবার শিকড় সহ সমস্ত গাছ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের মহাওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা
হয়। তবে আর দেরি না করে চলুন জেনে নি এই গাছের ওষুধি গুনাগুন ও এর ব্যবহার সম্পর্কে।
শোথ রোগে পুনর্ণবাঃ
শোথ রোগ নিরাময়ে পুনর্ণবা অধিক ব্যবহৃত
হয়। এটি শোথ রোগের ভাল ঔষধ বলেই এর একটি নাম হয়েছে শোথাঘ্নি। সর্বাঙ্গ শোথ বা যে-কোন
প্রকার শোথে তাজা গাছের রস বা মূলের রস ২/৩
চামচ করে সকাল-বিকাল খেলে ভাল ফল লাভ করা যায়। এর সাথে লবণ ও ভাত বর্জন করতে পারলে
আশাতীত ফল পাওয়া যায় । তাজা গাছ না পেলে শুকনো গাছের গুঁড়ো অথবা পানিতে সিদ্ধ করে ক্বাথ
খেলেও চলবে। এছাড়াও অনেকের মতে ২০/২৫ গ্রাম পরিমাণ পুনর্ণবাম, ৩/৪ গ্রাম পরিমাণ আদা,
৩/৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ পরিমাণ পানি থাকতে নামিয়ে ভাল করে ছেঁকে নিতে হবে
এবং সকাল-বিকাল দু´বেলা খেতে হবে। তাতে
বেশি উপকার পাওয়া যাবে। এটিকে মূত্রকৃচ্ছ্রতায় এবং গনোরিয়া রোগে ব্যবহার করা হয়। পুনর্ণবা
উদ্ভিদের প্রধান অ্যালকালয়েড হলো পুনর্ণভাইন।
প্রসূতির সমস্যায় পুনর্ণবাঃ
প্রসূতি মায়েদের অনেক রকম সমস্যা
হয়। কিছু সমস্যা রয়েছে অতি সাধারণ। তেমনি কিছু সমস্যায় পুনর্ণবা গাছ থেকে শুধু পাতা
নিয়ে শাক হিসেবে ভেজে ভাতের সাথে খেলে তাতেও বেশ উপকার পাওয়া যায়। সন্তান প্রসবের পর
প্রসূতির শরীরে পানি দেখা দিলে তাঁকে পুনর্ণবার পাতার শাক খেতে দেওয়া হয়। তাতে শরীরের
পানি কমার সাথে সাথে প্রসূতির বুকের দুধও কিছুটা কমে যায়। কাজেই বিষয়টির প্রতি লক্ষ
রাখা উচিত।
মূত্রথলীতে পাথর হলে পুনর্ণবাঃ
মূত্রথলীতে পাথর থাকলে সেটা নানা
রকম সমস্যার জন্ম দিতে পারে। পাথরের কারণে প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে, সংক্রামণ হয়ে নানা
জটিলতা দেখা দিতে পারে। মুত্রপাথরী অর্থাৎ মূত্রথলীতে পাথর হলে ১০/১২ গ্রাম পরিমাণ
শুষ্ক পূনর্ণবা চূর্ণ ৫/৬ কাপ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। পানি কমে যখন দুই কাপ পরিমাণ
হবে তখন এটিকে নামিয়ে ঐ ক্বাথ সকাল-বিকাল দু´বেলা খেতে হবে। এতে করে
মূত্রথলির পাথর প্রস্রাবের সাথে মূত্রপথে বের হয়ে যাবে।
নিদ্রা সমস্যায় পুনর্ণবাঃ
আপনার কি না ঘুমিয়ে সারারাত জেগে
থাকার অভ্যাস আছে? ক্লান্ত বা ঘুম ঘুম ভাব থাকা সত্ত্বেও ঘুম দেরিতে আসছে? কিংবা মাঝরাতে
ঘুম ভেঙ্গে গেলে আর ঘুমাতে পারছেন না? যদি উত্তর হ্যা হয়, তবে আপনি ইনসোমনিয়া বা
অনিদ্রাজনিত সমস্যায় ভুগছেন। অনিদ্রা সমস্যা সমাধানে পুনর্ণবা ভাল ফল দিয়ে থাকে। সে
ক্ষেত্রে ১৫/২০ গ্রাম পরিমাণ পুনর্ণবা ৪ কাপ পরিমাণ পানিতে জ্বাল দিয়ে এক কাপ পরিমাণ
থাকতে নামাতে হবে। পরে এটিকে ছেঁকে অর্ধেক পরিমাণ সকালে ও অর্ধেক পরিমাণ বিকালে খেতে
হবে। এভাবে ২/৩ দিন খেলে অনিদ্রা কেটে গিয়ে সুনিদ্রা হবে।
কফ সমস্যায় পুনর্ণবাঃ
ঠাণ্ডা লেগে বুকে শ্লেষ্মা বা কফ জমলে বেজায় অস্বস্তি
হয়। সেই সঙ্গে থাকে গলায় বা বুকে ব্যথা। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য রয়েছে প্রচলিত
প্রাকৃতিক পন্থা। কফ বিহীন পুরাতন কাশিতে ৩/৪ চামচ পুনর্ণবা মূলের রস একটু গরম করে
সকাল-বিকাল কয়েকদিন নিয়মিত খেলে কাশের অসুবিধাটা কেটে যাবে। সেইসাথে একইভাবে খেলে শুক্রতারল্য
রোগও ভাল হয়।
আর্টিকোরিয়া সমস্যায় পুনর্ণবাঃ
শরীরে আর্টিকেরিয়া অর্থাৎ সমস্ত শরীরে চাকা চাকা হয়ে ফুলে
উঠে এবং গরম সেঁকে আরাম বোধ হয়। এমতাবস্থায় ১৫/২০ গ্রাম পরিমাণ পুনর্ণবা চার কাপ পরিমাণ
পানিতে জ্বাল দিয়ে এক কাপ পরিমাণ থাকতে নামাতে হবে এবং ছেঁকে প্রত্যহ খেতে হবে। এতে
করে আর্টিকেরিয়া ভাল হয়।
এছাড়াও পুনর্ণবা উত্তম কফ নিসারক, হাঁপানিতে বুকে সর্দি
আটকে গেলে এর মূলের ক্বাথ ভাল কাজ করে, কাকড়া, বিছা প্রভৃতি হুলবিদ্ধ করলে এর উপর প্রয়োগ
যন্ত্রণা নিবারণ করে।
এর পাতার রস জণ্ডিস ও লিভারের অন্যান্য অসুবিধায় প্রয়োগ
করা হয়।
হৃদযন্ত্র ও বুকের বিভিন্ন পীড়ায় এর মূল ব্যবহৃত হয়।
স্বল্পঋতু বা ঋতুর অন্যান্য অসুবিধায় এর ক্বাথ অত্যন্ত
উপযোগী।
মোটকথা
পুনর্ণবা অনেক উপকারী একটি উদ্ভিদ। এর মধ্যে
প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। আমাদের সকলেরই উচিত এর যথাযথ ব্যবহার করা।
0 comments:
Post a Comment