তুলসী একটি ঔষধি গাছের নাম। এটি প্রাচীনকাল হতে বিভিন্ন
রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তুলসী গাছ প্রচুর অক্সিজেন উৎপন্ন করে এবং এ গাছের
চারপাশে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সৃষ্টি করে।
অনেক গুণ সমৃদ্ধ তুলসী রুচিকারক, বাতনাশক এবং পুরনো জ্বরে মহৌষধির কাজ করে।
তুলসী গাছের উপকারিতা বিশুদ্ধ বায়ু যোগানে সাহায্য করে ও মশার উপদ্রব হতে মুক্ত রাখে।
ওষুধের গুণে ভরা তুলসীর কদর সবার কাছে। তুলসীতে প্রচুর
পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক
হিসেবেও দারুন ভূমিকা তুলসীর। ছত্রাক ও অন্যান্য জীবাণুনাশকের কাজ করে তুলসী পাতা।
তাছাড়া শীত এলে শরীরে বাড়ে নানা রোগের উৎপাত। এই উৎপাত থেকে বাঁচতে তুলসীর তুলনা হয়
না। আসুন জেনে নেয়া যাক, বহুগুণে গুণান্বিত এই তুলসী গাছের উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে।
লিভারের কার্যক্ষমতা – নিয়মিত তুলসী পাতার রস খেলে উচ্চ
রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহের মাত্রা ঠিক রাখে। লিভারের কার্যক্ষমতা
বাড়িয়ে দেয়।
আমবাত বা এলার্জী : তুলসী পাতার রসের সঙ্গে সমপরিমাণ কাঁচা
হলুদের রস এবং দুর্বাঘাসের রস মিশিয়ে খেলে আমবাত বা এলার্জী থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
জ্বর- জ্বর হলে জলের মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী
মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করুন ৷ অথবা তিনটি দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন ৷ দিনে তিন-চার
বার ঐ বড়িটা জলের সঙ্গে খান ৷ জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে ৷ এটি শরীরকে ব্যাকটেরিয়া
ভাইরাসের হাত থেকেও রক্ষা করে।
সর্দিকাশি- সর্দি বা কাশি নিরাময়ে এক চামচ আদার রস ও সমপরিমাণ
তুলসীর রস এবং মধু খেলে দীর্ঘস্থায়ী সর্দি বা কাশি কমে যায়। এটি গলা ব্যথাও উপশম করে।
বয়স রোধ করে- তুলসী পাতার ভিটামিন সি, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস
ও এসেন্সিয়াল অয়েলগুলো চমৎকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে; যা বয়সজনিত সমস্যা
কমায়। এই কারণে তুলসী পাতাকে যৌবন ধরে রাখার টনিকও মনে করেন কেউ কেউ।
সাদা দাগ : মহিলাদের তলপেটের সাদা দাগ দূর করতে পরিমান
মতো তুলসী পাতার রস ও সমপরিমাণ কাঁচা হলুদের রসের সঙ্গে সামান্য দুধ মিশিয়ে দিনে ৩/৪
বার লাগালে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাদা দাগ দূর হয়ে যায়।
ডায়াবেটিস- ডায়াবেটিসের হাত থেকেও বাঁচাতে সাহায্য করে
তুলসী। রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি কিডনি ও লিভারকে
মেটাবলিক ড্যামেজের হাত থেকে বাঁচায়। তুলসী পাতায় প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও এসেনশিয়াল
অয়েল আছে যা মিথাইল ইউজেনল ও ক্যারিওফাইলিন উৎপন্ন করে। এই উপাদান গুলো অগ্নাশয়ের বিটা
সেলকে কাজ করতে সাহায্য করে। যার ফলে ইনসুলিন এর সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এতে ব্লাড
সুগার কমে এবং ডায়াবেটিস ভালো হয়।
শরীরের ঘা- আপনার শরীরে যদি কোনরকম ঘা হয়ে থাকে তাহলে তুলসী
পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান। আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে।
পুড়ে গেলে- শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস
এবং এর সাথে নারকেলের তেল ফুটিয়ে লাগান, এতে জ্বালাপোড়া কমে যাবে। পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি
শুকিয়ে যাবে এবং পোড়া দাগ উঠে যাবে।
ত্বকের সমস্যা- তুলসী ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাতেও বেশ ভালো
কাজ করে। ত্বকের রোশনি বাড়ানোর জন্য, ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রোন দূর করার জন্য তুলসী
পাতা পিষে মুখে লাগান। এর জন্য তুলসী, নিম, চন্দন মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করলে
উপকার হয়। স্কিনকে উজ্জ্বল করতে হলে তুলসির পেস্ট ব্যাবহার করুণ, এটি খুবি উপকারি।
প্রস্রাবের জ্বালা- প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে হলে
১০০ গ্রাম তুলসী পাতার রস, ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে রোজ পান
করুন । তুলসি গাছের বীজও এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপকারী। এর বীজ শুকিয়ে মিহি করে খেলে প্রস্রাবের
ইনফেকশনজনিত সমস্যা সমাধান হয়। পুরুষত্বহীনতা দূরীকরণে এই পাতার অবদান অপরিহার্য।
হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট- সকষ্ট জনিত বিভিন্নরোগ যেমন ব্রঙ্কাইটিস,
ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাঁপানি প্রভৃতি রোগের নিরাময়ক এই তুলসী। আদার রসের সঙ্গে সমপরিমাণে
মধু এবং কালো তুলসীর রস সকাল-বিকাল ২/৩ চামচ করে খেলে কিছুদিনের মধ্যে এ রোগ ভালো হয়ে
যাই।
মুখের দুর্গন্ধ- মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪-৫ বার
৩-৪ টি করে তুলসী পাতা চেবান। কিছুদিনের মদ্ধেই মুখের দুর্গন্ধ চিরতরে দূর হয়ে যাবে।
বমি বমি ভাব- যদি কখনও বমি কিংবা মাথা ঘোরা শুরু করে, তাহলে
তুলসী পাতার রসের মধ্যে ২-৩ টি গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে বমি ভাব কিংবা মাথা ঘোরাতে বিশেষ
উপকার পাওয়া যায়।
চুল পড়া : অপরিণত বয়সে চুল পড়া সমস্যা রোধে পরিমান মতো
তুলসী পাতার রস এবং আমলকী বেঁটে আধা ঘণ্টা মাথায় রাখলে চুলপড়া বন্ধ হয়।
চোখের সমস্যা- চোখে অনেক সময় নানারকম ফাংগাল ইনফেকশন হয়।
তার ফলে চোখে অ্যালার্জি, লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হয়। এগুলির হাত
থেকে বাঁচায় তুলসী। চোখের সমস্যা দূর করতে রাতে কয়েকটি তুলসী পাতা জলে ভিজিয়ে রেখে
ওই জল দিয়ে সকালে চোখ ধুয়ে ফেললে উপরোক্ত চোখের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাই।
এছাড়াও তুলসী পাতার রস ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তুলসী
পাতা বেটে সারা মুখে লাগিয়ে রাখলে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ হয়। তিলের তেলের মধ্যে তুলসী
পাতা ফেলে হালকা গরম করে ত্বকে লাগালে ত্বকের যেকোনো সমস্যায় বেশ উপকার পাওয়া যায়।
এছাড়া ত্বকের কোনো অংশ পুড়ে গেলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল হালকা গরম করে ক্ষতস্থানে
লাগালে ক্ষত খুব দ্রুত সেরে যাই।
ঘরের বারান্দাতে একটু আলো বাতাস আসলে সেখানেই একটি তুলসী গাছ লাগিয়ে দিতে পারেন। নিয়মিত তুলসী পাতার রস খেলে রোগ-বালাই থাকবে অনেক দূরে। তাই সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন অন্তত একটি করে তুলসী পাতা খান।
0 comments:
Post a Comment